গরম পানিতে মধু মেশালে মধু কি বিষাক্ত হয়ে যায়?
উত্তর হলোঃ
না। কিন্ত, কেন?
মোটামুটি ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে মধু নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, আমাদের সমাজে মধু নিয়ে অর্ধ সত্য এবং ডাহা মিথ্যা কিছু মিথ প্রচলিত আছে; মধুর ক্রেতা এবং বিক্রেতাও উভয়ই প্রায়ই এসব ভ্রান্ত ধারনার ফাঁদে পড়ে যান।
আমাদের এ লিখাটি মুলত মধুর ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই সচেতনতার জন্য।
কিছুকাল আগেও একটি ভ্রান্ত ধারনার প্রচলন ছিলো তা হলো মধু মাত্রই ফ্রিজে রাখলে জমে গেলে তা ভেজাল। আলহামদুলিল্লাহ, ক্রেতারা এখন সচেতন হয়েছেন, তারা এখন মধুর জমাটবাধার বৈজ্ঞানিক কারন জেনে গেছেন, বুঝে গেছেন, কিছু মধু ফ্রিজে রাখলে জমে, অনেক সময় ফ্রিজও লাগে না, একটু টান্ডা ওয়েদার পেলেই জমে যায়।
এখন মধু নিয়ে আরেকটি অর্ধ সত্য মিথ দ্বারা ক্রেতা, বিক্রেতারা কনফিউজড হচ্ছেন তা হলোঃ গরম পানিতে মধু মেশালে মধু বিষ হয়ে যায়।
এটা নিয়ে একটু কথা বলা দরকার।
আসলে এই ফলস মিথ ছড়ানোর নাটের গুরু হলো টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি স্বাস্থ্যপ্রতিবেদন। যেখানে “সাবধান! গরম যে কোন কিছুতে মধু মেশালে সেটি হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ডেন্জারাস!” নামে একটি ফিচার ছাপা হয়।
ইন্ডিয়ান টাইমসের সেই প্রতিবেদনের মুল ভিত্তি ছিলো ভারতীয় আয়ুর্বেদিক একটি থিম যেটার মতে মধু কখনই সরাসরি উত্তপ্ত করে ব্যবহার করা উচিত নয়, কেননা এতে বিষক্রিয়া হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, এটা আধুনিক বিজ্ঞানের কোন সাধারণ জ্ঞাত তথ্য নয় বা এমনকি অনেকগুলি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞান – প্রাকৃতিক চিকিৎসাও একে সাপোর্ট করে না।
যেমন, চাইনিজ হারবাল বিজ্ঞান বলে, হাল্কা গরম মধু মাঝে মাঝে ভাল হতে পারে, গরম পানিতে মধু যোগ করার কোনও সমস্যা নেই।
তাহলে ঘটনা কি? ঘটনাটা হলোঃ “এখানে আয়ুর্বেদকে সঠিকভাবে ব্যক্ষাই করা হয় নাই!”
আসলে, আয়ুর্বেদে মতে ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে গরম হলে মধুর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুন কমে যায়, যার অর্থ কিন্তু এটি বিষাক্ত হয়ে যাওয়া নয়। তাহলে টাইমস বিষয়টাকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলল কেন? উত্তর হলোঃ চিনি আছে এমন যে কোনো খাবার ৪২ ডিগ্রীর বেশী গরম করলে তাতে ‘ফাইভ-হাইড্রোক্সিমিথাইলফারফুরাল (এইচএমএফ)’ নামক রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয়, যা ক্যান্সারের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
লক্ষ্য করুনঃ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র কিন্তু বলছে মধু কখনই সরাসরি উত্তপ্ত করা অর্থাৎ মধু রান্না করা বা খুব গরম তরলে যুক্ত করা উচিত নয়। অর্থাৎ সরাসরি মধু চুলার ওপর দেবেন না বা ফুটন্ত গরম পানিতে দেবেন না, তাহলে সেটার তাপমাত্রা অবশ্যই ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক ওপরে উঠে যাবে। সুতরাং আপনি কুসুম গরম পানি বা কুসুম গরম দুধে (যার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশেই থাকে) আপনি নিশ্চিন্তে মধু মেশাতে পারেন। এটা কখনোই বিষ হবে না। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকলে আপনি নিজের মুখে পানির চুমুকটি আরামে রাখতে পারবেন।
আসলে শুধু মধুই না, তাপ / বর্ধিত তাপমাত্রা সর্বদা প্রকৃতির যে কোনও কিছুরই ‘প্রভাব’ পরিবর্তন করে দেয়, যদি সেই বর্ধিত তাপের পরিমান হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী। এটুকু মাথায় রাখলেই হবে।
মূল কথাটি হ’ল তাপ এনজাইমকে ধ্বংস করে। তাই মধু উত্তপ্ত করলে এতে থাকা এনজাইমগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়ে ফলস্বরূপ মধুর ঔষধি মান কমিয়ে দেয়।
যেমন, মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাপ দিলে তার পরাগ, এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মতো উপকারী পুষ্টিগুলি সহ অপসারিত হতে পারে। তাই মধু রান্না করা বা খুব গরম তরলে যুক্ত করা উচিত নয়।
এছাড়া, তাপ দেয়ার পর বা পাস্তুরাইজড করা মধু বিষাক্ত হয়ে যায়, এমন কোনও প্রমাণ নেই।
সুতরাং আপনি যদি কখনও গরম পানি বা দুধে মধু যোগ করেন বা আপনার চা, কফির জন্য একটি ‘প্রাকৃতিক’ মিষ্টি হিসাবে চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই ভাল, তবে পানি/ চা/ কফি কিছুটা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, অবশ্যই ফুটন্ত পানিতে দিবেন না।
মধু সম্পর্কিত আরও কিছু পোস্টঃ
১. মধু ও শারীরিক সুস্থতা > টপিক:শারীরিক সুস্থতায় মধু গুণাগুণঃ
পর্ব-০১: https://www.facebook.com/102914111160597/posts/164428901675784/
পর্ব-০২: https://www.facebook.com/102914111160597/posts/167357614716246/
২. মধু ও স্বাস্থ্য > টপিক:সাধারন জ্বর, ঠান্ডা, কাশি প্রতিরোধে মধুর ঔষধি গুণঃ
https://www.facebook.com/102914111160597/posts/153922509393090/
আশ শেফার মধু- বাংলাদেশের সেরা মধুঃ
আশ শেফা আপনার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুধু খাঁটি মধুই সংগ্রহ করে না, মধুর সর্বোচ্চ মানও নিশ্চিত করে। তাই আশ শেফা মধুঘরের মধু নিঃসন্দেহে খাঁটি তো বটেই, পাশাপাশি মানের দিক থেকেও দেশ সেরা। আশ শেফার অনলাইন স্টোরে বিভিন্ন ধরণের মধু রয়েছে। এখান থেকে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত হতে নিশ্চিন্তে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে পারেন। খাঁটি স্বাস্থ্যকর মধুর ক্রয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশ শেফার মধুর সম্পর্কে আরও যে কোনও বিস্ততারিত তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে আশ শেফা মধুঘরের সাথে 01919442385 নাম্বারে বা অনলাইনে ashshefa.com এ যোগাযোগ করুন।
সবাইকে ধন্যবাদ। সকলের নীরোগ স্বাস্থ্য কামনায় সদা আপনার পাশেই